এই আয়াত (সূরা আত-তাওবা: ১০৮) মদিনায় মসজিদে কুবা ও মসজিদে দ্বিরার-এর ঘটনার প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়।
এই আয়াত (সূরা আত-তাওবা: ১০৮) মদিনায় মসজিদে কুবা ও মসজিদে দ্বিরার-এর ঘটনার প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়। এখানে মূলত মুনাফিকদের দ্বারা নির্মিত এক প্রতারণামূলক মসজিদের কথা বলা হয়েছে, যেটি ইসলামের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল।
ঘটনার পটভূমি:
মদিনায় ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর, নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবিদের বিরোধিতা করত একদল মুনাফিক। এই মুনাফিকদের নেতা ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল। তারা মুসলমানদের বিভক্ত করতে এবং ইসলামের শত্রুদের জন্য ষড়যন্ত্রের স্থান তৈরি করতে একটি মসজিদ নির্মাণ করে, যা ইতিহাসে “মসজিদে দ্বিরার” নামে পরিচিত।
এই মসজিদ নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল:
1. মুসলিম সমাজে ফেতনা সৃষ্টি করা।
2. মুসলমানদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করা।
3. ইসলামের শত্রুদের আশ্রয় দেওয়া।
এই ষড়যন্ত্রের পিছনে ছিল রোমান সম্রাট ও বাইজেন্টাইনদের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু লোক, যারা মদিনায় মুসলমানদের ভিতর থেকে দুর্বল করতে চেয়েছিল। তারা নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এসে বলল যে, তাদের মসজিদটি যেন তিনি এসে উদ্বোধন করেন এবং এতে নামাজ আদায় করেন।
আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ:
তখনই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এই আয়াত নাজিল করে জানিয়ে দেন, “তুমি কখনোই এই মসজিদে নামাজ পড়ো না।” কারণ এটি মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্রমূলক কেন্দ্র। বরং এমন মসজিদে নামাজ আদায় করা উচিত, যা তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রথম দিন থেকে নির্মিত হয়েছে (যেমন মসজিদে কুবা)।
মসজিদে কুবা ও এর গুরুত্ব:
আল্লাহ এই আয়াতে “প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ” বলতে মসজিদে কুবাকে বোঝাচ্ছেন, যা হিজরতের সময় নবীজির হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই মসজিদে যারা নামাজ আদায় করত, তারা নিজেদের পবিত্রতার প্রতি যত্নবান ছিল এবং আল্লাহ পবিত্রতা রক্ষাকারীদের ভালোবাসেন।
শেষ পরিণতি:
এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর, নবীজির নির্দেশে সাহাবিরা মসজিদে দ্বিরার ধ্বংস করে দেন এবং সেখানে আগুন লাগিয়ে দেন, যাতে মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র সফল না হয়।
এই আয়াতের শিক্ষা:
1. ইসলামকে ক্ষতি করার জন্য তৈরি কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়, যদিও তা ধর্মীয় রূপ ধারণ করে।
2. তাকওয়া বা আল্লাহভীতি ছাড়া কোনো আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
3. মসজিদের উদ্দেশ্য শুধু আল্লাহর ইবাদত হওয়া উচিত, কোনো রাজনৈতিক বা ষড়যন্ত্রমূলক কাজ নয়।
4. মুসলমানদের ঐক্য ও সততা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয় যে, শুধু বাহ্যিক ধর্মীয় কর্মকাণ্ডই যথেষ্ট নয়, বরং তার পেছনের উদ্দেশ্যও খাঁটি ও নির্ভেজাল হওয়া আবশ্যক।