মসজিদুল হারাম, ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান
মসজিদুল হারাম, ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান, যেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। এই মহান মসজিদের ইমামদের সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত ও খুতবা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে। আসুন, মসজিদুল হারামের বর্তমান ইমামদের সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিই।  
শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস :
শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস বর্তমান সময়ের অন্যতম সম্মানিত ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি সৌদি আরবের মক্কা নগরীর পবিত্র মসজিদুল হারামের প্রধান ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে। 
জন্ম ও শিক্ষা:
শায়খ সুদাইস ১৯৬০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের আল-কাসিম অঞ্চলের বুকাইরিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি পবিত্র কুরআন হিফজ সম্পন্ন করেন। রিয়াদের মুসান্না বিন হারেসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৭৯ সালে মাহাদ আল-রিয়াদ আল-ইলমি থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়া বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৭ সালে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলুল ফিকাহ বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৯৫ সালে মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়া বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।  
পেশাগত জীবন:
১৯৮৪ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে শায়খ সুদাইস মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব হিসেবে নিয়োগ পান, যা তাকে সর্বকনিষ্ঠ ইমামদের একজন করে তোলে। ২০১২ সালে তিনি মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পরিষদের প্রধান হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তার নেতৃত্বে পবিত্র মসজিদগুলোর সেবা ও ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে। 
বর্তমান দায়িত্ব ও পদ:
২০২৩ সালের আগস্ট মাসে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের এক রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে শায়খ সুদাইসকে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর ধর্মীয় বিষয়ক প্রশাসনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পদে তিনি পবিত্র দুই মসজিদের ধর্মীয় কার্যক্রম, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের কার্যাবলি তদারকি এবং ধর্মীয় বিষয় সংক্রান্ত সকল বিষয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। 
উল্লেখযোগ্য অবদান:
শায়খ সুদাইস ইসলামের শান্তিপূর্ণ বার্তা প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপের প্রয়োজনীয়তা উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ২০০৫ সালে তিনি দুবাই আন্তর্জাতিক কুরআন পুরস্কারের ‘বর্ষসেরা ইসলামী ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে সম্মানিত হন।   
শায়খ সুদাইসের নেতৃত্বে পবিত্র দুই মসজিদের সেবা ও ব্যবস্থাপনায় যে উন্নতি সাধিত হয়েছে, তা মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত ও খুতবা মুসলিম বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে এবং তাদের ঈমান ও আমল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
শায়খ ড. মাহের আল-মুয়াইকিলি
শায়খ মাহের আল-মুয়াইকিলি মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি মসজিদুল হারামের অন্যতম প্রধান ইমাম ও খতিব। তার সুমধুর ও আবেগময় কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত মুসল্লিদের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।   
শায়খ ড. ফয়সাল ঘাজ্জাভি
শায়খ ফয়সাল ঘাজ্জাভি মক্কার স্থানীয় বাসিন্দা এবং মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কোরআন তিলাওয়াত ও ইসলামী শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং মুসল্লিদের মাঝে তার খুতবা ও তিলাওয়াতের জন্য পরিচিত।
শায়খ ড. সালেহ বিন হামিদ
শায়খ সালেহ বিন হামিদ সৌদি আরবের বিচার বিভাগে উচ্চপদস্থ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইসলামী আইন ও ফিকহে বিশেষজ্ঞ এবং তার খুতবা ও বক্তৃতা মুসলিম উম্মাহর জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে। 
শায়খ ড. আবদুল্লাহ আওয়াদ আল-জুহানি
শায়খ আবদুল্লাহ আওয়াদ আল-জুহানি মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন এবং মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কোরআন তিলাওয়াতে বিশেষ পারদর্শী এবং তার সুমধুর কণ্ঠে তিলাওয়াত মুসল্লিদের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। 
এই ইমামগণ মসজিদুল হারামে মুসল্লিদের ধর্মীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করে মুসলিম উম্মাহর সেবা করে যাচ্ছেন। তাদের সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত ও খুতবা আমাদের হৃদয়ে ঈমানের জ্যোতি প্রজ্বলিত করে।