চাঁদ দেখা না গেলে কবে ঈদ করবেন?
চাঁদ দেখা না গেলে কবে ঈদ করবেন? কুরআন-হাদীসের আলোকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা
ভূমিকা:
ঈদুল ফিতর মুসলিম জাতির জন্য এক আনন্দময় দিন। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলিমরা আল্লাহর অনুগ্রহে ধন্য হয়ে ঈদের দিনে মিলিত হন। তবে, মাঝে মাঝে আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে চাঁদ দেখা সম্ভব হয় না, তখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে: এমন অবস্থায় আমরা কখন ঈদ করব?
হাদীসের আলোকে নির্দেশনা:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্পষ্টভাবে আমাদের এর উত্তর দিয়েছেন। সাহিহ বুখারির হাদীসে এসেছে:
হাদীস:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
“صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلاَثِينَ”
অর্থাৎ,
“তোমরা চাঁদ দেখে রোযা শুরু করো এবং চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন করো। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে (চাঁদ দেখা না যায়), তবে শা‘বানের ৩০ দিন পূর্ণ করো।”
— [সহিহ বুখারি, হাদীস ১৯০৯; সহিহ মুসলিম, হাদীস ১০৮১]
এখান থেকে বোঝা যায়:
যদি কোন দেশের আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে এবং কেউ চাঁদ দেখতে না পায়, তবে শা‘বান বা রমাদান মাস ৩০ দিনে পূর্ণ করে পরবর্তী দিন ঈদ পালন করতে হবে। এর ফলে ঈদের নির্ধারিত সময় নিশ্চিত হয়ে যায় এবং বিভ্রান্তি থাকে না।
সাহাবীদের অনুশীলন:
রাসূল (সা.)-এর যুগে এবং পরে সাহাবারা চাঁদ দেখা নিয়ে অনেক যত্নশীল ছিলেন। কিন্তু যদি মেঘাচ্ছন্ন রাত হতো, তারা কখনো অনুমানে ঈদ করতেন না, বরং মাস ৩০ দিন পূর্ণ করতেন। এতে করে উম্মাহর ঐক্য ও ইবাদতের শুদ্ধতা রক্ষা হতো।
আধুনিক প্রযুক্তির যুগে:
যদিও বর্তমানে অনেক দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাহায্যে চাঁদের অবস্থান আগেই জানা যায়, তারপরও হাদীসের এই মূলনীতি মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য অপরিহার্য। বহু ফকীহ ও আলেম বলেন, চাঁদ দেখার প্রচেষ্টা চালানো এবং না দেখা গেলে ৩০ দিন পূর্ণ করাটাই উত্তম পদ্ধতি।
উপসংহার:
ঈদ কোনো অনুমান-ভিত্তিক উৎসব নয়, এটি শরিয়ত নির্ধারিত একটি আনন্দময় ইবাদত। তাই আমাদের উচিত রাসূল (সা.) এর সুন্নাত অনুযায়ী চাঁদ দেখে ঈদ পালন করা, এবং প্রয়োজনে ৩০ দিন পূর্ণ করা। এতে করে আমাদের ঈদ হবে আরও বরকতময়, ঐক্যবদ্ধ এবং সুন্নাতভিত্তিক।